জাকাত দেয়ার নিয়ম ও সময়
আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা তাওবা : ১০৩)। এই আয়াতে আল্লাহপাক সম্পদ পরিশোধিত হওয়ার কথা বলেছেন। আর হাদীস শরীফ থেকে জানা যায় যে, যাকাতের মাধ্যমে সম্পদ পরিশোধিত হয়। ধনীদের যে সম্পদ, তার মালিক সে একা নয়। এই সম্পদে গরিবের হক রয়েছে।
আয়হীন গরিব মানুষ, ঋণে জর্জরিত লোক, কারাগারে বন্দির পরিবার, আকস্মিক রোগব্যধিতে আক্রান্ত দুঃখী মানুষ, সন্তানহীন বৃদ্ধ ও অথর্ব বয়স্ক নারী-পুরুষ আপনার দানের অপেক্ষায়। এদের মধ্যে যারা যাকাত পাওয়ার মতো তাদের যাকাত দিন। যারা সাধারণ দান পেলে বিপদমুক্ত হয় তাদের দান-সাদাকাহ করুন। পবিত্র রমজানে নফল দান; ফরজের সমান সওয়াব নিয়ে আসবে। আর যাকাতের সওয়াব হবে অন্য সময়ের চেয়ে সত্তর গুণ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, এতিম ও বিধবার জন্য যে কষ্ট করে জীবিকা অর্জন করে তার মর্যাদা সারাদিন রোজা রাখা ও সারা রাত নামাজে দাঁড়িয়ে কাটানো লোকের সমান। -আল হাদিস।
মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, আমি (মোহাম্মদ সা.) ও এতিমের লালনকারী জান্নাতে পাশাপাশি থাকব। (তিনি (সা.) তখন হাতের দু’টি একসাথে মিলিয়ে দেখান, এভাবে একসাথে থাকব।) -আল হাদিস। রমজানের দিনগুলো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মুমিনদের মনে এখন রমজান বিদায়ের কষ্ট। এসময় নিজের সম্পদের যাকাত হিসাব করে প্রার্থীদের দিয়ে দেয়া উত্তম। যদি দেয়া শেষ না হয়, পরেও তা সারা বছর দেয়া যাবে। কিন্তু রমজানে হিসাব করে নিয়ত করে নিলে পরেও সত্তর গুণ সওয়াব আশা থেকে যায়। অনেকে যাকাতের নামে শাড়ী, লুঙ্গি ইত্যাদি দিয়ে থাকে। যা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে যাকাত দিলে, যাকাতের যে উদ্দেশ্য তা কখনোই পূরণ হয় না।
যাদের ওপর যাকাত ফরজ তারা তাদের যাকাতযোগ্য মালের শতকরা আড়াই ভাগ দ্রুত গরিবদের হস্তান্তর করলে তারা তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারে। যাকাতের নিয়ম হলো আরবি মাসের হিসাবে বছরের যে কোনো একটি দিন আপনি নিজের যাকাত হিসাব দিবস হিসাবে নির্ধারণ করবেন। সেদিন আপনার নিজের নগদ টাকা, ব্যাংক-ব্যালেন্স, বন্ড, শেয়ার ডিবেঞ্চার, স্বর্ণ-রূপা, ব্যবসা পণ্য, বিক্রয়ের উদ্দেশে রাখা জমি-ফ্ল্যাট ইত্যাদি সবকিছুর সেদিনকার বাজার মূল্য হিসাব করে যত হয় তার ৪০ ভাগের এক ভাগ অর্থ্যাৎ ২.৫% যাকাত দিতে হবে। যেমন এক লাখ টাকায় আড়াই হাজার টাকা। ৪০ লাখ টাকার যাকাত এক লাখ টাকা। যাকাতের সর্বনিম্ন নেসাব সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর যে কোনোটির সমান মূল্যের টাকা অথবা ব্যবসা পণ্য।
নিজের ব্যবহারের বাড়ি, আসবাবপত্র, গাড়ির ওপর যাকাত নেই। উপার্জনের মাধ্যম, শিল্প কারখানার জমি, মেশিনপত্র, অবচয় হয় এমন ইকুইপমেন্ট ইত্যাদিতে যাকাত আসে না। ভাড়া দেয়া বাড়ি, দোকান, ট্রান্সপোর্ট এসবের আয়ের ওপর যাকাত আসবে, কিন্তু মূল সম্পত্তির ওপর যাকাত নেই। যদি ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী বাস, ট্রাক, কার ইত্যাদি বিক্রির জন্য রাখে তাহলে ব্যবসা পণ্য হিসাবে এসবের ওপরও যাকাত আসবে। ঋণ, পাওনা টাকা, ফসলি জমি, বাগানবাড়ি ইত্যাদি বিষয়ক মাসআলা নিকটস্থ বড় মাদরাসার ফতোয়া বিভাগ বা প্রাজ্ঞ মুফতির নিকট থেকে জেনে নেয়া ওয়াজিব।
যাকাত কেবল নিজের পিতা-মাতা ও স্ত্রী-সন্তানদের দেয়া যায় না। এছাড়া যাকাত নেয়ার উপযুক্ত চাচা-মামা, ভাই-বোন ইত্যাদি সকল আত্মীয়কে দেয়া যায়। যাকাত দেয়ার সময় গ্রাহককে বলে দেয়া মোটেও জরুরি নয়। বরং যাকাত না বলে গিফট, ঈদ উপহার, সৌজন্য বা সহায়তা ইত্যাদি যে কোনো শোভনীয় কথা বলে দিয়ে দেয়াই উত্তম। যাকাত-ফিতরা ছাড়াও সাধারণ অর্থ থেকে আলেম, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম, ভদ্র দরিদ্র পরিবার, চেনা-জানা মানুষ, প্রতিবেশি, সহকর্মী, শ্রমিক-কর্মচারী, কাজের লোক, ড্রাইভার-দারোয়ান প্রভৃতি সার্কেলে ঈদের বাজার খাদ্য ও পোষাক উপহার হিসেবে দেয়া খুবই উত্তম। এতে প্রচুর সওয়াবের পাশাপাশি সামাজিক মিল-মহব্বত দৃঢ় হয়। শারীরিক-মানসিক সুস্থতা, চেহারায় নূর, সুখী জীবন, দীর্ঘায়ু ও অপরিসীম আধ্যাত্মিক তৃপ্তি লাভ করা যায়। অতএব, যাকাত ও সাধারণ দানের এ সময়টি কাজে লাগান। সময় কিন্তু খুব দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। জানা নেই আরেকটি রমজান আমরা ক’জন পাব।