শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | বিনোদন | শিরোনাম » দেশের প্রথম নারী ড্রামার জর্জিনা হক
দেশের প্রথম নারী ড্রামার জর্জিনা হক
১৯৫৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে বেড়ে উঠছিলেন ছোট্ট জর্জিনা হক। বাবা ফরমাজুল হক ছিলেন সে সময়ের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ একজন। পরিবারের ১০ ভাইবোনের সবারই গানের সঙ্গে সখ্য ছিল, আর সেই সুবাদে জর্জিনাও সুরকে ভালোবাসতেন।
তবে সুর ভালোবাসলেও সেটা গলায় না ধারণ করে বরং গানকে যারা ফুটিয়ে তোলে সেই বাদ্যযন্ত্রে বেশি আগ্রহ ছিল জর্জিনার। তাই তো লুকিয়ে নিজের ভাইয়ের ড্রামস বাজাতেন।
ড্রামস বাজানো এতটাই ভালোবাসতেন জর্জিনা যে ইটভাঙা নারী শ্রমিকদের সঙ্গে বসে ইট ভাঙার তালের সঙ্গে বাজানোর অনুশীলন করতেন। একদিন শেখ কামাল তাকে এমনভাবে অনুশীলন করতে দেখে ফেলেন। যেহেতু বিএএফ শাহীন স্কুলে পড়তেন তাই একই স্কুলে পড়তেন শেখ পরিবারের সন্তানেরাও। সেই সুবাদে পূর্ব পরিচিত ছিলেন তারা। পরবর্তীতে জর্জিনার এমন আগ্রহ দেখে শেখ কামাল তাকে স্পন্দন ব্যান্ডের সঙ্গে অনুশীলন করতে বলেন। এভাবেই স্পন্দনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি এবং শেখ কামালেরই উৎসাহে ’৭২ সালে টিএসসিতে ড্রামস বাজিয়ে ছিলেন তিনি। সেটিই ছিল তার প্রথম নারী ড্রামার হিসেবে আত্মপ্রকাশ।
এরপর দেশের প্রথম নারী ড্রামার হিসেবে সবাই তাকে চিনে নেয়। তবে সেভাবে জনসম্মুখে বাজানো না হলেও তিন বোন মিলে গঠন করেন ব্যান্ড ‘থ্রি হাগস সিস্টারস’। সে সময়ে বেশকিছু ছোটখাটো অনুষ্ঠানে বাজিয়েছিলেন। এর মধ্যে বেইলি রোডের মহিলা একাডেমি, হলি ক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রেসকোর্স ময়দানে ছিল কয়েকটি অনুষ্ঠান। বিয়ের পর স্বামী-সন্তানসহ বহু বছর ছিলেন বিদেশে। তবে সেখানেও নিজের চর্চা তিনি বন্ধ রাখেননি, বরং অনুশীলন করে গেছেন। তার পর পার হয়েছে অনেক বছর। দেশে ফিরেছিলেন তিনি।
স্বাধীনতার-পরবর্তী বছর ১৯৭২ সালে প্রথম বিজয়জয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ব্যান্ড ‘স্পন্দন’ এর সঙ্গে ড্রামস বাজিয়েছিলেন জর্জিনা হক। তখন তিনি ছিলেন ১৬ বছরের এক তরুণী। সেই একই তারুণ্য না থাকলেও জর্জিনা একই জায়গায় ফিরেছিলেন নতুন উদ্যমে। ২০১৬ সালে বিজয়ের মাস, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়। ‘রক্তে রাঙা বিজয় আমার’ টিএসসির ওপেন এয়ার ‘কনসার্টে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ৪৪ বছর পর গিটার হাতে হাজির হয়েছিলেন এই নারী ড্রামার। সবাইকে গিটার বাজিয়ে, গান গেয়ে আর ড্রামস বাজিয়ে দর্শকদের পুরো মাতিয়ে রেখেছিলেন।