বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিরোনাম » হালখাতার উৎসব টিকে আছে পুরান ঢাকায়
হালখাতার উৎসব টিকে আছে পুরান ঢাকায়
আজ শুরু বাংলা ক্যালেন্ডারের নতুন বছরের। বাঙালি জাতির উৎসব পহেলা বৈশাখ পালন করা হবে আজ। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের পহেলা বৈশাখের উৎসবের অন্যতম উপকরণ ছিল হালখাতা। দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে এ রীতি। এ ঐতিহ্য এখনও টিকে রয়েছে পুরান ঢাকাকে কেন্দ্র করে। বিশেষত পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা জাঁকজমকপূর্ণ হালখাতার আয়োজন করে থাকেন। ঢাকার আর কোথাও এমন আয়োজন চোখে পড়ে না।
বছরব্যাপী পুরনো হিসাবের খাতা বন্ধ এবং নতুন হিসাবের খাতা খোলার আনন্দ-আয়োজন, সঙ্গে আপ্যায়ন ও আনুষ্ঠানিকতার নামই হালখাতা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ রীতি এখন ভুলে যেতে বসেছে বাংলাদেশিরা। অনেকে জানেই না এ উৎসব। আবার প্রযুক্তির ছোঁয়া পেয়ে খাতায় করা হিসাব বাদ দেওয়ার কারণে জৌলুস হারিয়েছে এ উৎসব।
২০২০ সালে আঘাত হানা করোনা মহামারির কারণে গত দুবছর আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি। সেজন্য এবার হালখাতা উৎসবে তেমন আগ্রহ নেই পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, প্রতিবছরের মতো এবারও হালখাতা উৎসবের আয়োজন করা হবে। তবে তা কেবল নিয়ম রক্ষার জন্য।
আগে পুরান ঢাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হালখাতা উৎসবকে আনন্দময় করে তুলতে নেওয়া হতো নানা প্রস্তুতি। এ সময় ফুল দিয়ে সাজানো হয় দোকান। তবে এবার দোকানগুলোতে এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বুধবার পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, ইসলামপুর বাজার, বংশাল ও বাদামতলীসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এসব তথ্য।
শাঁখারীবাজারের স্বর্ণের ব্যবসায়ী সুজয় বণিক সময়ের আলোকে বলেন, ‘গত দুবছর করোনা মহামারির কারণে তেমন বেচা-বিক্রি হয়নি। তাই হালখাতা করে তেমন লাভ হবে না। তাই বড় আয়োজনে হালখাতা করার কোনো পরিকল্পনা নেই।’ ‘হালখাতা করা হয় সাধারণত আগের বিক্রির বকেয়া টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে। গত দুবছর তেমন বিক্রিই হয়নি। তাই বাকি টাকা আদায়ের সম্ভাবনাও নেই।’
একই বাজারের বিয়ের পণ্য বিক্রি করা ব্যবসায়ী অলোক দত্ত বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই হালখাতার উৎসব পালন করে থাকি। কিন্তু দিন দিন এ রীতি হারিয়ে যাচ্ছে। তাই এখন এ বিষয়ে এত গুরুত্ব দেওয়া হয় না। করোনার আঘাতে বেচাকেনাও কমে গেছে। তাই আগ্রহ নেই এ বছর।’
স্বর্ণ ব্যবসায়ী মানিক চন্দ্র চন্দ সময়ের আলোকে বলেন, ‘গত দুবছর স্বর্ণের দাম বেড়েছে ব্যাপক। এ সময়ে ব্যবসা হয়েছে খুবই কম। তাই খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ স্বর্ণ কেনেনি। এ কারণে আমাদের ব্যবসার অবস্থা করুণ। এর মধ্যে বাড়তি টাকা খরচ করে আমরা হালখাতা উৎসব করতে চাই না। নিয়ম রক্ষার জন্য আগের দিন রাতে দোকান ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করব। সকালে নতুন খাতা খোলার মাধ্যমে বেচা-বিক্রি শুরু করব। যদি কেউ আসে তাকে অবশ্যই মিষ্টিমুখ করাব।’
বাদামতলীর আড়তদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘হালখাতা পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। আমরা পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতিবছর হালখাতা করি। এবারও করব। তবে তা শুধুই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য। কারণ গত দুবছর ধরে ব্যবসায় মন্দা।’
ইসলামপুর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী অমরেশ রায় বলেন, ‘বাপ-দাদার কাছ থেকে শেখা হালখাতা। তাই প্রতিবছর আমরা হালখাতা উৎসব করি। এবারও করব। তবে আগের মতো বড় আকারে করব না।’ কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলত দুটি কারণে এবার বড় আয়োজন করব না। প্রথমত ব্যবসায় মন্দা। দ্বিতীয়ত এ উৎসব নিয়ে মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়া।’
উল্লেখ্য, প্রতিবছর নতুন বাংলা বছর শুরুর দিনে হালখাতা উৎসবের আয়োজন করা হয়। দেশে পহেলা বৈশাখের উৎসব আয়োজন করা হবে আজ বৃহস্পতিবার। তবে পুরান ঢাকায় হালখাতা উৎসব হবে আগামীকাল শুক্রবার। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫৮৪ সালে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তনের পর মূলত হালখাতার প্রচলন হয়।