মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » কুমিল্লায় পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে দুই স্কুলছাত্রকে মারধর
কুমিল্লায় পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে দুই স্কুলছাত্রকে মারধর
কুমিল্লা নগরীতে সড়কের পাশে লাগানো নির্বাচনি পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা মডার্ন স্কুলে পড়ুয়া দুই ছাত্রকে মারধর, হুমকি ও তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত দুই ছাত্র বাসা থেকে বের হওয়াসহ স্কুলে যাওয়া বন্ধ রেখেছে।
ভুক্তভোগী দুজন শিক্ষার্থী সম্পর্কে খালাতো ভাই এবং তাদের বাবা নেই। তাদের একজন সামিউল মোত্তাকিম মাহিন অষ্টম শ্রেণিতে এবং এনশান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আদিল নবম শ্রেণিতে মডার্ন স্কুলে পড়েন। তারা রেইসকোর্স ধানমন্ডি সড়কের দারুল খাদেম নামের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
সামিউলের বাবার নাম মৃত জাকির হোসেন। এনশান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আদিলের বাবা মো. ফজলুল হক আমড়াতলী স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন। গত বছর তিনি করোনায় মারা যান।
স্থানীয়রা জানিয়েছনে, সপ্তাহখানেক আগে স্কুলে যাওয়ার সময় দুষ্টুমির ছলে সড়কের পাশে সাটানো একটি পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন সামিউল মোত্তাকিম মাহিন। ওই পোস্টারটি ছিল সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলমের। গত রোববার (১০ এপ্রিল) স্কুল থেকে ফেরার পথে এনশান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আদিলের পথ রোধ করে তাকে মারধর ও নির্যাতন করেন ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলমসহ আরও দুজন। পোস্টার ছেঁড়ার কথা অস্বীকার করে আদিল সামিউল মোত্তাকিম মাহিনের নাম বলে দেয়। আদিলকে আটকে রেখে সঙ্গে সঙ্গে মনিরুল আলম ও তার সহযোগিরা দারুল খাদেম বাসার তৃতীয় তলার সামিউল মোত্তাকিম মাহিনের ভাড়া বাসায় এসে তাকে হুমকি ধমকি দিতে থাকেন। এমন সময় মাহিনের নানা দু’হাত জোর করে মনিরুলের কাছে ক্ষমা চান এবং যে বিচারই হউক মাথা পেতে নেওয়ার কথা বলেন। তখন মনিরুল ছয়টি পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ করে তাদের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
শিক্ষার্থী সামিউল মোত্তাকিম মাহিন জানান, স্কুলে যাওয়ার সময় এমনিতেই দুষ্টমি করে আমি একটি পোস্টার ছিঁড়েছি। আমি বুঝতে পারিনি। সেটা সিসি ক্যামেরায় দেখে মনিরুল আলম আমার ভাইকে রাস্তায় ধরে মেরেছে এবং আমাকে ধরে নিতে বাসায় এসে টানাটানি করেছে। পরে নানা ভাই টাকা দেওয়ার পর চলে গেছে এবং আদিল ভাইকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি ভয়ে আজকে স্কুলে যাইনি।
সামিউল মোত্তাকিম মাহিন ও এনশান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আদিলের নানা মো. শাহনেওয়াজ বলেন, আমার দুটি নাতিই এতিম। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমি সব ছেড়ে তাদের সঙ্গে থাকি। আমাদের গ্রামের বাড়ি চান্দিনাতে। তিন বছর আগে মাহিনের বাবা লিভার সিরোসিসে মারা গেছেন। গত বছর আদিলের বাবা করোনায় মারা গেছে। আমার নাতি বাচ্চা মানুষ স্কুলে যাওয়ার সময় না বুঝে পোস্টার ছিঁড়েছে। সেজন্য আমার বড় নাতি আদিলকে মেরে আটকে রেখে আবার ছোট নাতি মাহিনকে ধরে নেয়ার জন্য বাসায় এসেছিল মনিরুল আলম। আমি রোজা রেখে হাত জোর করে ক্ষমা চেয়ে নাতিকে রক্ষা করেছি। এবং তাদের কথা মতো তিন হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রক্ষা পেয়েছি। আমরা অসহায়!
মাহিন ও আদিলের নানু মজলে নুর বেগমকে মামলা করবেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এমনিতেই ভয়ে আছি কখন আবার কি করে। মামলা করলে নিরাপত্তা কে দিবে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।
স্কুল ছাত্র আদিল জানান, স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে মনিরুল আমাকে মারধর করে আটকে রাখেন। পরে বাসায় এসে মাহিনকে টানাটানি করেন এবং টাকা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দেন।
আদিলের মা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমি বাসায় ছিলাম না। আমার ছেলেকে মেরেছে এবং তিন হাজার টাকা জরিমানা নিয়ে গেছে। আমার ভয়ে টাকা দিয়ে দিছি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।
ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলম সাংবাদিকদের জানান, দুই শিক্ষার্থী আমার পোস্টার ও ফেস্টুন ছিঁড়েছে। আমার কাছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে। সেজন্য জরিমানা নিয়েছি, মারধর করিনি।