ওয়াদা পালনের গুরুত্ব-১
অঙ্গীকার তথা ওয়াদা পূর্ণ করা মুমিনের অন্যতম সিফাত। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য এই মহৎ সিফাত হাসিল করা এবং তা রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো অত্যন্ত জরুরি। মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের ১৮ নং পারার সূরা মুমিনূন এর (১-১১) নং আয়াতে কারীমায় প্রকৃত মুমিন বান্দার গুণাবলি সম্পর্কে ইরশাদ করেন, ‘সফলকাম হলো ঐসব মুমিন, যারা তাদের সালাতে গভীরভাবে মনোযোগী, যারা অনর্থক ক্রিয়াকর্ম এড়িয়ে চলে। যারা সঠিকভাবে যাকাত আদায় করে। যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে নিজেদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত।
কেননা এসবে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর এদের ব্যতীত যারা অন্যকে কামনা করে, তারা হলো সীমা লঙ্ঘনকারী। যারা আমানতের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার রক্ষা করে। যারা তাদের সালাতসমূহের হেফাযত করে। তারাই হলো উত্তরাধিকারী। যারা উত্তরাধিকারী হবে ফেরদৌসের। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। মানব জীবনের প্রতিটা স্তরে ওয়াদা রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। গোটা মানবজাতিকে ওয়াদা রক্ষা ও পূর্ণ করার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বোঝাতে মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বহু আয়াত নাযিল করেছেন।
Powered by Ad.Plus
তিনি ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করো।’ (সূরা মায়েদা : ১)। তিনি আরো বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা জেনে শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে এবং তোমাদের মধ্যকার পারস্পরিক আমানতসমূহ খেয়ানত করো না’। (সূরা আনফাল : ২৭)। আরো বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, আমানতসমূহ তার যথার্থ পাওনাদারদের নিকট প্রত্যার্পণ করে দিতে। (সূরা নিসা : ৫৮)।
ওয়াদার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। যথা : মহান আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা, বান্দার সঙ্গে কৃত ওয়াদা, সামাজিক দায়বদ্ধতার ওয়াদা, আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে অন্যান্য প্রাণীদের হক আদায়ের ওয়াদাসহ অন্যান্য। একজন খালেস মুমিন মুত্তাকীর অন্যতম গুরু দায়িত্ব হলো, সে সব ধরনের ওয়াদাই পূরণ করবে এবং অন্যরাও যেন এ বিষয়ে সচেতন হয় তা নিশ্চিত করবে। কেননা, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কঠিন হাশরের ময়দানে অঙ্গীকারের ব্যাপারে গোটা মানবজাতির থেকে হিসাব নেবেন। পবিত্র কোরআনে তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো। নিশ্চয়ই (তোমরা) অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’। (সূরা বনি ইসরাঈল : ৩৪)।
ওয়াদার হার কিসিমের মধ্যে মহান আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদার গুরুত্ব সর্বাধিক। কেননা পবিত্র কোরআন বলছে, ‘আর তোমরা আল্লাহর ওয়াদা পূরণ করো। (সূরা আল আনআম : ১৫২)। অন্যত্র এসেছে, ‘হে বনি আদম! আমি কি তোমাদের থেকে এই ওয়াদা নেইনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করবে না। কারণ, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (সূরা ইয়াসিন : ৬০)।
এই ওয়াদার মূল সবক হলো, জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে, সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহপাকের নির্দেশসমূহ পবিত্র কোরআন ও হাদিসে নববীর আলোকে আপোষহীনভাবে পালন করা। ফরজকে ফরজরূপে মান্য করা আর সুন্নাতকে সুন্নাতরূপে। সেই সাথে মানুষের মধ্যকার পরস্পর বৈধ ওয়াদাগুলোকেও যাথাযোগ্য পালন করা। এসম্পর্কে আল্লাহ তাআলা গোটা মানবজাতিকে বলেন, ‘আর তোমরা প্রতিশ্রুতি দিলে, তা পূর্ণ করবে।’ (সূরা বাকারা : ১৭৭)।
এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি হাদিস শরিফের অসংখ্য জায়গায় ওয়াদা রক্ষা করার গুরুত্ব সম্পর্কে তাগিদ দেয়া হয়েছে। হাদিসে নববীতে ওয়াদা খেলাফকে মুনাফিকের অন্যতম বড় আলামত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ফরমান, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে, সে সুস্পষ্ট মুনাফিক। আর যার মধ্যে এ স্বভাবগুলোর কোনো একটি থাকে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফেকির একটি দোষ রয়ে যায়। আর মুনাফেকীর আলামতগুলো হলো : তার কাছে কেউ কোনো কিছু আমানত রাখলে, তা খেয়ানত করে। সে কথা বললে, মিথ্যা বলে। ওয়াদা করলে, তা ভঙ্গ করে। এবং ঝগড়া করলে, গাল-মন্দ করে। (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)।