রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | শিরোনাম » টেকসই উন্নয়নে সক্রিয় নাগরিক সমাজ জরুরি
টেকসই উন্নয়নে সক্রিয় নাগরিক সমাজ জরুরি
জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন জলবায়ুবিষয়ক জার্মান বিশেষ দূত ও স্টেট সেক্রেটারি জেনিফার লি মরগান। চার দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ওপর জোর দেন। টেকসই উন্নয়নের জন্য সক্রিয় নাগরিক সমাজ থাকার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
জেনিফার লি মরগান বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা বলে, টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি সক্রিয় নাগরিক সমাজ অবশ্যই প্রয়োজন।
তাদের স্থানীয় জ্ঞান, প্রশিক্ষণ চমত্কার। আমি মনে করি, অনেক প্রকল্পে তাদের সঙ্গে আমাদের অংশীদারি থেকে আমরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছি। সক্রিয় নাগরিক সমাজ ছাড়া আমাদের কাজ অনেক কঠিন হতো। ’সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জেনিফার মরগান বলেন, কয়লা কারখানা উদ্বেগের বিষয় এবং এটি বিশ্ব যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার একটি অংশ। বাংলাদেশে এটি সুন্দরবনের স্থানীয় সমস্যা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু কয়লার প্রভাব ভালোভাবে নথিভুক্ত। তিনি বলেন, ‘সৌরশক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তি বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ একাধিক সুবিধাও পাওয়া যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের খরচ বেশি নয়—এটিও সুখবর। ’
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার ও জার্মান স্টেট সেক্রেটারির ব্যক্তিগত উপদেষ্টা মার্কাজ স্ট্যাডথাউজ উপস্থিত ছিলেন। জার্মানির রাষ্ট্রদূত জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূতের বাংলাদেশ সফরকে দুই দেশের সম্পর্কের ৫০তম বছর ও সহযোগিতার শুভ সূচনা বলে উল্লেখ করেন।
জেনিফার লি মরগান বলেন, জলবায়ুবিষয়ক জার্মান বিশেষ দূত হিসেবে এটিই তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। জলবায়ু ইস্যুতে জার্মানির নতুন সরকারের জোরালো অঙ্গীকারের কথা জানাতে তিনি কাজ করছেন।
জার্মান সরকার বৈশ্বিক জলবায়ু আন্দোলন গ্রিনপিসের প্রধান জেনিফার মরগানকে গত ফেব্রুয়ারিতে জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ করে। বিশেষ দূত হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে বাংলাদেশকে বেছে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেনিফার লি মরগান বলেন, জলবায়ু সংকটে বাংলাদেশ ‘গ্রাউন্ড জিরোতে’ আছে। বাংলাদেশ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের বড় শিকার। আবার এই প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে কাজ করছে। বিশ্বে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এই দেশের পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতা তিনি বিশ্বের অন্য দেশগুলোর কাছে তুলে ধরবেন।
জার্মান বিশেষ দূত তাঁর বাংলাদেশ সফরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য, জলবায়ুবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া তিনি সুন্দরবনে জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জার্মান বিশেষ দূত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেওয়া উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করেন। জীবাশ্ম জালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাংলাদেশের দক্ষতা ও সক্ষমতা জোরদারে তিনি জোরালো অংশীদারির আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় তিনি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথা শুনেছেন।
বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে জেনিফার লি মরগান বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আমি এখানে শুনতে ও শিখতে এসেছি; এবং আমরা একসঙ্গে মিলে কী করতে পারি তা দেখতেও এসেছি। আমি মনে করি, আমাদের একে অপরের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ’
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে ভয়ংকর আগ্রাসন হিসেবে অভিহিত করে বিশেষ দূত বলেন, রাশিয়ার জীবশ্ম জ্বালানির ওপর থেকে জার্মানিসহ অন্য দেশগুলোর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।
ইউক্রেন সংকটের ফলে বিশ্বে জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনার ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে জানতে চাইলে জার্মান বিশেষ দূত বলেন, ইউক্রেনে পুতিন ও রাশিয়ার আগ্রাসন ভয়ংকর। এ ক্ষেত্রে সবার অগ্রাধিকার শান্তি। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, জার্মানি বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টি জলবায়ু পরিবর্তন থেকে অন্যত্র সরে গেছে। তারা প্রত্যেকেই এসংক্রান্ত জাতীয় লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে।