বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ময়মনসিংহ | শিরোনাম » বাঁধে ধস: ঘুম নেই হাওর অঞ্চলের কৃষকদের চোখে
বাঁধে ধস: ঘুম নেই হাওর অঞ্চলের কৃষকদের চোখে
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরি উপজেলায় ধনুনদের পার্শ্ববর্তী হাওরসমূহের বোরো ফসল রক্ষায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধের বিভিন্ন অংশে ফাটল ও ধস দেখা দিয়েছে। চরম ঝুঁকিতে পড়েছে এইসব বাঁধ। যেকোনো সময় ভেঙে গিয়ে ডুবিয়ে দিতে পারে হাজার হাজার হেক্টর জমির উঠতি বোরো ফসল। তৈরি ফসল হাতছাড়া হওয়ার আশংকায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন এলাকার সকল কৃষক পরিবার।
জানা যায়, গত সোমবার রাতে মোহনগঞ্জের চর-হাইজদিয়া ও খালিয়াজুরি উপজেলার কীর্তনখলা বাঁধের কোনো কোনো অংশে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে রাতেই টুকরি-কোদাল-চাটাই ও বাঁশ হাতে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ। স্ব-উদ্যোগ আর স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় কাজ করেন তারা। গতকাল বুধবারও তাদের বাঁধের ওপর নজরদারি চালিয়ে যেতে দেখা যায়। শেষ রক্ষা হবে কি-না ভরসা করা যাচ্ছে না। তবে আশার কথা, পানি হ্রাস পেতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বুধবার বিকেলে ধনুনদের পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে উজানে বৃষ্টি হলে পানি আবার বাড়তে পারে।
এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, নির্মাণ ত্রুটির কারণে পানির সামান্য চাপেই বাঁধে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এখনো বিপদসীমার নিচে রয়েছে ধনুনদের পানি। পানির উচ্চতা আরো চার-পাঁচ ফুট বাড়লে বাঁধসমূহ পূর্ণ চাপে পড়বে। বর্তমান স্বল্প চাপে কেন বাঁধসমূহ কৃষকদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে তা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান তারা।
কীর্তনখলা বাঁধ এলাকার উপরকারভোগী কৃষক সুজন মিয়া, আলিম উদ্দিন, কামাল উদ্দিন, হারেছ মিয়াসহ অনেকের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। খননযন্ত্র দিয়ে পাশ থেকে মাটি তুলে তড়িঘড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। মাটি পেটানো হয় নাই।
মাটি ভরাটের পর শুধু উপরিভাগে ড্রেসিং আর পার্শ্বে স্লোভিং করা হয়েছে। অভ্যন্তরে ফাঁকা রয়ে গেছে। মূলত, এসব কারণেই পানির স্বল্পচাপে বাঁধ ভাঙার উপক্রম হয়েছে। তাদের আরো অভিযোগ, সরকারের প্রকৌশলীরা কাজের শুরুতে একবার আসেন। শেষ হওয়ার পর আর একবার আসেন সাংবাদিকদের নিয়ে দেখানোর জন্য। এছাড়া, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনেও রয়েছে অনিয়ম। এলাকার প্রকৃত কৃষকদের নেওয়া হয় না। প্রকল্পের মূল কমিটি অন্যদের কাছে প্রকল্প বিক্রয় করে দেয়। তারা যাচ্ছেতাইভাবে কাজ করে। সকল অনিয়ম দূর করা না গেলে কৃষকদের কপাল পোড়া বন্ধ হবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, আগাম বন্যার হাত থেকে বোরো ফসল রক্ষার জন্য নেত্রকোনার ৯ উপজেলায় ৩৯০ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে। এসব বাঁধ বর্ষায় পানির নিচে চলে যায়। বর্ষাশেষে যখন জেগে ওঠে, তখন দেখা যায় বিভিন্ন অংশ ভাঙা। চলতি বছর ১৭৮ দশমিক ৪৬ কিমি দীর্ঘ-অংশ ভেঙেছে বলে নির্ণয় করা হয়েছে। ভাঙা অংশসমূহই মেরামত করা হয়েছে। এ জন্য ১৩৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) কাজ করেছে। ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
নেত্রকোনা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, সকল প্রকল্পই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারো কোনো রূপ গাফিলতির সুযোগ নাই। দূর থেকে মাটি এনে বাঁধ সির্মাণ করা হয়েছে।
নেত্রকোনা কৃষি খামার বাড়ির উপ-পরিচালক এফ এম মোবারক আলী বলেন, চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলেই ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার টন ধান, যার মূল্য ৭০০ কোটি টাকার বেশি।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আব্দুর রহমান মঙ্গলবার খালিয়াজুরি উপজেলার কীর্তনখলা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহ পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, বাঁধ রক্ষায় সর্বোচ্চ শক্তি নিয়েগের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কারো কোনো শৈথিল্য সহ্য করা হবে না।