মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » কৃষি ও বাণিজ্য | ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিরোনাম » দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নিয়ন্ত্রণের দাবি সাধারণ মানুষের
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নিয়ন্ত্রণের দাবি সাধারণ মানুষের
রমজানে শরীয়তপুরে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বিক্রেতাদের দাবি বেশি দামে কেনার কারণে, বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। নজরদারি বাড়ানোর দাবি ভুক্তভোগী ক্রেতাসাধারণের।
শরীয়তপুর জেলার সর্ববৃহৎ বন্দরখ্যাত ঐতিহ্যবাহী বাজার ভোজেশ্বর বাজার। বাজার ঘুরে দেখা গেল, রামজান উপলক্ষ্যে বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আবারও বেড়েছে। বাজারে দেখা দিয়েছে ভোজ্যতেলের সংকট। বাজারের বেশিরভাগ মুদির দোকানই রয়েছে তেলশূন্য। আর যাদের দোকানে রয়েছে তারা বৃদ্ধি মূল্যেই বিক্রি করছেন তেল। ভোজ্যতেল কোম্পানি বাজারে তেল দিচ্ছে না এমন অভিযোগ দোকানিদের।
বাজারের ব্যবসায়ী মধুসুদন পাল জানান, ‘অগ্রীম টাকা পাঠিয়েছি তারপরেও ডিলার এসে সয়াবিন তেল দিচ্ছে না। তারা বলে কোম্পানি তেল দিচ্ছে না। সরকার তেলের দাম কমিয়েছে আর কোম্পানি তেল দেওয়া বন্ধ করেছে। সরকারের উদ্যোগ তারা মানছে না। রমজান মাসে সবসময় পর্যাপ্ত তেল থাকে। এ বছর এর উল্টো। আমার কাছে ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল আছে। গরিব মানুষ ৫ লিটার তেল এক সাথে ৭৯৫ টাকা দিয়ে কিভাবে কিনবে?’
ব্যবসায়ী সুজন মিয়া জানায়, ‘বেড়েছে সব ধরনের ডালের দাম। কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫-৬ টাকা। সবকিছুরই দাম বাড়ছে। এতে আমাদের ছোট দোকানদারদের বিপদ। ব্যবসা করতে বেশি পুঁজি লাগে। আর দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ কেনাকাটা করতে পারে না।। এভাবে চলতে থাকলে পুঁজিশূন্য হয়ে লোকসানে পড়ব।’
পাচক গ্রামের ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘রমজানে বাজার করতে এসে বেকায়দায় পড়েছি। সয়াবিন তেল কিনব কিন্তু বাজার ঘুরে ১ লিটারের একটা সোয়াবিন তেলের বোতল পেলাম না। অনেক মুদির দোকানে তেল নেই। এসব প্রশাসনের চোখে পড়েনা। এতবড় একটা বাজার এখানে তিন হাজারের মতো মুদির দোকান আছে অথচ এক বোতল তেল পাওয়া যায় না। আমার মনে হয় ব্যবসায়ীরা তেলের সংকট তৈরি করে বেশি দামে বেচার পরিকল্পনা করছে। আমার লাগবে ১ লিটার তেল আমাকে ৫ লিটার তেল কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
মশুরা গ্রামের সামচু ছৈয়াল জানায়, ‘গতকাল আমি টমেটো ২০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি কিনেছি। আজ সেই টমেটো ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এক এক দোকানে একই জিনিসের দাম এক এক রকম। আমরা কেনাকাটা করতে এসে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’
বেড়েছে সবধরনের মাছের দাম। কেজিপ্রতি ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে মাছ। মাছ বিক্রেতারাই বলছে মাছের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। মাছ বাজারের খুচরা মাছ বিক্রেতা দেলোয়ার জানায়, ‘বেশি টাকা দরে মাছ কিনতে হচ্ছে। এতে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। কিন্তু দাম বাড়ায় ক্রেতাসংখ্যা কম। মানুষের হাতে টাকা নেই।’
মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানের দুই মাস আগে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। মাস খানেক আগে থেকেই দাম বাড়ছে। ১ কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা কেজি দরে। বেড়ে গেছে বয়লার মুরগীর দাম। বাজার করতে এসে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষকে। আড়তে দাম বাড়ায় সবজির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে দোকানিরা।
কাঁচা তরিতরকারি বিক্রেতা মোতালেব ছৈয়াল জানান, আড়তে প্রতিটি জিনিসের দাম ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তাই আমরা বেশি দামে কিনি আর বেশি দামেই বিক্রি করি।
এদিকে মহা উৎসবে বেড়েছে যেন ইফতারসামগ্রীর দামও । সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা পর্যন্ত। আপেল, কমলা, মাল্টা, আনার কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০ টাকা। আর আকাশ ছোঁয়া বেড়েছে খেজুরের দাম। গত বছরের তুলনায় নিম্ন ও উন্নত জাতের খেজুরের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। এমন অবস্থায় বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না দাবি ফল বিক্রেতাদের। এদিকে ফল কিনতে এসে দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। বাজার তদারকির দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশমত বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে প্রশাসন। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে শরীয়তপুরে ৬৬ হাজার ৩৩ জনকে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবি পণ্য পৌছে দেয়া হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি কার্যক্রম চলমান আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা পর্যায়ে ও উপজেলা পর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে ও ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়েও সচেতনতা বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। টিসিবির পণ্য বিতরণ ও তদারকির কারণে বাজার সহনশীল রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। যারা ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৮ লক্ষাধিক মানুষের বসবাসে কৃষিপ্রধান জেলা শরীয়তপুরের ৬ উপজেলায় শতাধিক ছোট বড় হাট-বাজার রয়েছে। এসব হাট বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে, এডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অন্তঃত ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত।