হতাশা কাটিয়ে রোমাঞ্চের আভা
সুযোগ তৈরি হলো একাধিকবার, সুযোগ হাতছাড়াও হলো বারবার। উইকেট যেখানে মিলত পারত একাধিক, মিলল কেবল একটি। তবে চতুর্থ দিনে সকালের সেশনের সেই আক্ষেপ কাটিয়ে শেষ দিনের রোমাঞ্চের গল্প লেখার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। সকালের সেশনের এক উইকেট হারিয়ে ৯৯ রান যোগ করা প্রোটিয়ারা লাঞ্চ থেকে ফিরেই ভিন্ন চেহারায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ১০৫ রান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা মুহূর্তেই ১৫৭/৫! গতকাল চা বিরতি পর্যন্ত যদিও লিড হয়ে গেছে ২২৬, তবে খুব খারাপ কিছু না হলে এই ম্যাচে ড্র’র স্বপ্ন দেখতেই পারে মুমিনুল হকের দল।
ডারবানের কিংসমিডে আগের দিন ৯৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে তিনশর কাছে নিয়ে যান মাহমুদুল হাসান জয়। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা স্থায়ী ম্যারাথন ইনিংসে করেন ১৩৭ রান। তরুণ এই ওপেনারের চমৎকার ইনিংসের জন্যই দক্ষিণ আফ্রিকা ৬৭ রানের চেয়ে বড় লিড নিতে পারেনি। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে কেবল ৪ ওভার ব্যাট করতে পার দক্ষিণ আফ্রিকা। আলোকস্বল্পতা ও বৃষ্টিতে ১৭ ওভার কম খেলা হয়। তৃতীয় দিনের সেই ৭৫ রানের পুঁজি নিয়ে গতকাল দিন শুরু করে স্বাগতিকরা। সেখান থেকে দলটিকে টেনে নিয়ে যান ডিন এলগার ও কিগান পিটারসেন। তবে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশ লড়াই করেছে দারুণভাবেই। এ সেশনে যেমন দেখা গেছে অবিশ্বাস্য ক্যাচ, বিপরীতে সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে এবারও। সে সব সুযোগ নিতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর চাপটা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ত আরেকটু। শেষ পর্যন্ত চা-বিরতিতে স্বাগতিকেরা গেছে ২২৬ রানের লিড নিয়ে, হাতে আছে ৫ উইকেট। ১৮ রান করা রায়ান রিকেলটনের সঙ্গী ৫ রানে অপরাজিত উইয়ান মুল্ডার।
বেশ দৃঢ় একটা জুটি নিয়ে সেশনটা শুরু করেছিলেন এলগার ও পিটারসেন। বিরতির পর প্রথম ওভারেই প্রথমবারের মতো এ ইনিংসে বোলিং করতে আসেন কাঁধের চোটে ভোগা তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রুও দেন। গুডলেংথ থেকে তার ভেতরের দিকে ঢোকা বলে যথেষ্ট দৃঢ় ছিল না ৬৪ রান করা ডিন এলগারের রক্ষণ। বাংলাদেশ অবশ্য সে উইকেট পেয়েছে রিভিউ নিয়ে, অন-ফিল্ডে এলবিডব্লুর আবেদন নাকচ করেছিলেন আম্পায়ার মারাই এরাসমাস। এ টেস্টে এ নিয়ে পাঁচটি সিদ্ধান্ত বদলালেন এরাসমাস। এলগারের উইকেটের পরই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভালোভাবে চেপে ধরে বাংলাদেশ, আর ১০ রান তুলতে তারা হারায় পিটারসেন ও টেম্বা বাভুমাকেও।
পিটারসেনের উইকেট পান বেশ কিছুক্ষণ ধরেই ভালো বোলিং করা মেহেদী হাসান মিরাজ। গুডলেংথের বলটা ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে গিয়ে শর্ট লেগে মাহমুদুল হাসানের ভালো ক্যাচে পরিণত হন পিটারসেন, ৮৫ বলে ৩৬ রান করার পর। অবশ্য এর আগেই রান-আউট হতে পারতেন পিটারসেন, তবে পয়েন্ট থেকে প্রথম ইনিংসে নিজের দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোয়ের পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি মিরাজ। পিটারসেনের আউট হওয়ার পরের ওভারে অবশ্য ‘দায়মোচন’ করেছেন প্রথম ইনিংসে ডিন এলগারের ক্যাচ ফেলা ইয়াসির আলী। এবার ইবাদত হোসেনের বলে স্লিপে নিয়েছেন বাভুমার অবিশ্বাস্য ক্যাচ নেন ইয়াসির আলী।স্লিপে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে নীচু হওয়া ক্যাচটা নিয়ে ইয়াসির ঢুকে গেছেন হাইলাইটস প্যাকেজে। রায়ান রিকেলটন ও কাইল ভেরেইনা চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তবে তাঁদের জুটিও টেকেনি বেশিক্ষণ। ভেরেইনাকে প্রায় ফিরিয়েছিলেন মিরাজ, আম্পায়ার আড্রিয়ান হোল্ডস্টকের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত বদলে গেছে রিভিউয়ের পর। শেষ পর্যন্ত মিরাজের বলেই ফিরতে হয় তাঁকে। রিভার্স সুইপ করতে যাওয়া ভেরেইনার বটম-এজ তার বুটে লেগে যায় ক্লোজ-ইনে থাকা সাদমান ইসলামের কাছে। ‘কিং-পেয়ার’-এর সামনে থাকা মুল্ডার ক্যাচ তুলেছিলেন প্রথম বলেই, কিন্তু সেটি গিয়েছিল একটু নিচু হয়ে। মুল্ডার জীবন পেয়েছেন পরের ওভারেই, এবার নিজের বলে ফিরতি ক্যাচটার কাছে ঠিক সময়ে হাত নিয়ে যেতে পারেননি খালেদ আহমেদ। বর্ধিত সেশনের বাকিটা সময় নিরাপদেই পার করেছেন মুল্ডার ও রিকেলটন। তাসকিন শেষ পর্যন্ত করেছেন ৭ ওভার।