রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » পূর্ব ইউক্রেনকে কেন ঘিরে ফেলতে চায় রাশিয়া
পূর্ব ইউক্রেনকে কেন ঘিরে ফেলতে চায় রাশিয়া
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ইউক্রেনীয় সেনাদের অনেক পাল্টা হামলার পর বিশেষত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের চারপাশ থেকে প্রতিরোধের মুখে পড়ার পর রাশিয়া তাদের লড়াইয়ের বেশির ভাগ মনোযোগ এখন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে নিয়ে গেছে। মার্কিন দাবি সত্য হলে দনবাসখ্যাত অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইউক্রেনের পুরনো এই শিল্পনগরীকে ‘স্বাধীন করার’ লক্ষ্য কেন নির্ধারণ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আর সে জন্য তাঁকে কী করতে হবে এবং তা কিভাবে সম্ভব হবে, সেই আলোচনায় ব্যস্ত বিশ্লেষক মহল।
রুশ বাহিনী এরই মধ্যে মানবিক সংকট তৈরির মধ্য দিয়ে মারিওপোলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
কিন্তু তারা ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ পরাস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। পূর্বাঞ্চলে নতুন হামলার সতর্কতার পর প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা আমাদের জমির প্রতি মিটার রক্ষার জন্য লড়াই করব। ’
পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সঙ্গে আট বছরব্যাপী যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন সবচেয়ে প্রশিক্ষিত বাহিনীকে সেখানে মোতায়েত করে। সেখানে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়লেও এখন পর্যন্ত রুশ সেনাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা।
ইউক্রেনের দনবাস কি এবং পুতিন কেন এর দখল চান?
ভ্লাদিমির পুতিন যে দনবাসের কথা বলছেন, তা ইউক্রেনের ঐতিহ্যবাহী কয়লা ও ইস্পাত উৎপাদনকারী অঞ্চল। এই অঞ্চল বলতে পূর্বাঞ্চলীয় বড় দুই এলাকা লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে বোঝায়, যা দক্ষিণের মারিওপোল শহরের শেষ থেকে উত্তর সীমান্ত পর্যন্ত এলাকাকে নির্দেশ করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ক্রেমলিন নির্ধারিত এই অংশটি রুশ ভাষাভাষি অধ্যুষিত অঞ্চল। এটি যতটা না ইউক্রেনীয়, তার চেয়ে বেশি রুশ, এমনটাই বলেন রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের স্যাম ক্রানি ইভানস। কেবল রুশ ভাষাভাষি অঞ্চল হওয়ার কারণেই রাশিয়া দনবাস দখলের দিকে মনোযোগ দিয়েছে কি না অর্থাৎ এটাই একমাত্র কারণ কি না, তা অবশ্য ক্রানি ইভানস নিশ্চিত করে বলেননি।
রুশ নেতারা বার বার দাবি করছেন, ইউক্রেনীয় সরকার পূর্বাঞ্চলে গণহত্যা চালিয়ে আসছে। যুদ্ধ শুরুর সময় পূর্বাঞ্চলের দুই-তৃতীয়াংশ ইউক্রেনের দখলে ছিল। বাকি অংশে রুশপন্থীদের আধিপত্য। রুশপন্থীরা এই অংশে আট বছরব্যাপী চলা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ছোট রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করেছে। রাশিয়া যদি এই পুরো অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে ক্রিমিয়ার মতো করে তা অধিগ্রহণ করতে হবে। ২০১৪ সালে যে প্রক্রিয়ায় ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়া দখল করেছিল, ঠিক সেভাবে। ইউক্রেন আক্রমণের আগে প্রেসিডেন্ট পুতিন অবশ্য দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেন।
বিচ্ছিন্নতাবাদী অধ্যুষিত লুহানস্কে ভীতিকর পরিস্থিতি
রুশপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল শান্ত হলেও তারা অভিযোগ করেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী বেসামরিক ভবনে বোমাবর্ষণ করছে এবং এতে বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছে। দোনেৎস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সেখানে ৭২ জন বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে লুহানস্কের একজন নারী বলেন, তিনি শহরে অনেক রুশ সামরিক বহর দেখেছেন এবং এখনকার পরিবেশ ভয় ও আতঙ্কের।
ওই নারী আরো বলেন, ‘আমি ভীত…এটা ভীতিকর। ‘ তিনি জানান, উপযুক্ত বয়সের পুরুষ মানুষকে রুশপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীতে নাম লেখাতে বলা হচ্ছে। এর মধ্যে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা নিজেদের আড়াল করে রাখছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অঘোষিতভাবে রাশিয়ার নাগরিক হয়ে গেছি। প্রত্যেকের রুশ পাসপোর্ট রয়েছে। ‘
ইউক্রেনীয় বাহিনী কি টিকে থাকতে পারবে?
যুদ্ধ শুরুর সময় সবচেয়ে প্রশিক্ষিত ১০টি ব্রিগেডের সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী সবচেয়ে ভালোভাবে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ করছিল। ক্রানি ইভানস বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনীয় বাহিনীর শক্তি সম্পর্কে সত্যি জানি না এখন। ‘ তিনি মনে করেন, গত কয়েক সপ্তাহে স্বেচ্ছাসেবীরা যোদ্ধাদের দলকে আরো বড় করে তুলেছে। রাশিয়া পাঁচ সপ্তাহের যুদ্ধে বড় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং রুশ সেনাদের মনোবলও কমে গেছে। সূত্র : বিবিসি