রমজানের ফজিলত
আসছে পবিত্র রমজান মাস। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যলাভের বিশেষ এ মাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দশদিন আল্লাহর রহমত নাজিলের, দ্বিতীয় দশদিন গোনাহ মাফ তথা মাগফিরাতের এবং তৃতীয় দশদিন আল্লাহর আজাব থেকে নাজাতের জন্য নির্ধারিত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এটা এমন এক মাস যে প্রথম দশ দিন রহমতের বারিধারায় পরিপূর্ণ। মাঝের দশ দিন ক্ষমা ও মার্জনা লাভের জন্য নির্ধারিত এবং শেষ দশদিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের উপায়রূপে নির্দিষ্ট।
রোজাদারদের মধ্যে কিছু মানুষ আছেন, যারা তাকওয়া ও পরহেজগার সম্পন্ন এবং পাপ ও বর্জনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেন। সিয়াম সাধনার মাঝে কোনো ভুলত্রুটি করে ফেললে সাথে সাথে তওবা ও এস্তাগফার করে নিজেদের সংশোধন ও ত্রুটিমুক্ত করে নেওয়া যায়। এ শ্রেণির রোজাদারদের প্রতি রমজান মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথেই রহমতের ফজিলত বর্ষণ হতে থাকে। তারা যখন রোজার প্রথম দশদিন একান্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে অতিবাহিত করেন, তখন তারা আর সেই মানুষ থাকেন না। তাদের মাঝে মুমিন সুলভ মহৎ গুণাবলী আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে যায়।
রমজানের প্রথম দশদিন শুরু হচ্ছে। এ দশ দিন শেষ হতে না হতেই রমজানের রহমত বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর আসবে মাগফিরাত ও নাজাতের দশদিন করে বাকি ২০ দিন। রমজানের যখন প্রথম দিন শুরু হয় তখন রহমতের দিন আরম্ভ হয়। আর বান্দা যখন সঠিক নিয়তে রোজা রাখে, রমজানের সব হকগুলো আদায় করে, সঠিকভাবে সংযমী হয়, হালাল রুজি দ্বারা সাহরি খায়, হালাল রুজি দ্বারা ইফতার করে, কাউকে গালি না দেয়, কারো হক নষ্ট না করে, ঘুষ না খায়, এভাবে সারাদিন কাটিয়ে দেয় এবং এভাবে সব রমজানের রোজা রাখার নিয়ত করে- তার জন্য রহমত প্রথম রমজান থেকেই শুরু হয়। যা রমজানের শেষ পর্যন্ত অবধারিত থাকে। এ ছাড়াও তার জন্য দ্বিতীয় দশদিন তার মাগফিরাত শুরু হয়ে যায় এবং গুণাহগুলো মাফ হতে থাকে।
নবী করিম (স.) বলেন, ‘জান্নাতের মধ্যে রাইয়ান নামক এক দরজা আছে, এ দরজা দিয়ে কেবল কেয়ামতের দিন রোজাদার লোকেরা প্রবেশ করতে পারবেন। ঘোষণা দেওয়া হবে রোজাদার লোকেরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে, তাদের প্রবেশের পরপরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে।’
হাদিসে বর্ণিত, যখন আল্লাহপাক কাউকে ভালোবাসেন তখন জিব্রাঈলকে (আ.) বলেন, ও আমার প্রিয় ব্যক্তি, সুতরাং তুমিও তাকে ভালোবাসো। জিব্রাঈল (আ.) তখন তাকে ভালোবাসতে থাকেন ও আসমানে ঘোষণা করে দেন যে, অমুক আল্লাহর প্রিয় বান্দা কাজেই তোমরা তাকে ভালোবাসতে থাক, তখন আসমানের বাসিন্দারা তাকে ভালোবাসতে থাকেন। অতঃপর জমিনবাসীর অন্তরে তার মহব্বত ঢেলে দেওয়া হয় এবং সাধারণ নিয়মের ঊর্ধ্বে কাছে ও দূরের সবাই এমনকি সমুদ্রের বাসিন্দা ও নিবিড় জঙ্গলের বাসিন্দা পর্যন্তও তাকে ভালোবাসতে থাকে ও তার জন্য দোয়া করতে থাকে।
কুরআন মজিদে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আমার ভালোবাসা পেতে হলে নবী করিম (স.) এর অনুসরণ কর।’
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত মুসলিম শরীফের এক হাদিসে বলা হয়েছে, যারা রমজানের চাঁদের প্রথম তারিখ থেকে শেষদিন পর্যন্ত রোজা রেখেছে তারা সে দিনের মতই নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপরূপে জন্ম দিয়েছিলেন। অর্থাৎ মাতৃগর্ভ থেকে মানুষ যেভাবে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয় রমজানের ৩০ দিন রোজা পালন করলে সে তেমন নিষ্কলুষ হয়ে যাবে।