সোমবার, ২৮ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | ঢাকা | শিরোনাম » মানবিকতা দিয়ে অপরাধ দমনে সাফল্য দেখিয়েছে র্যাব
মানবিকতা দিয়ে অপরাধ দমনে সাফল্য দেখিয়েছে র্যাব
র্যাব মানবিকতা দিয়ে অপরাধ দমনের মতো কাজ করে নজিরবিহীন সাফল্য দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
সোমবার (২৯ মার্চ) সকালে কুর্মিটোলা র্যাব সদর দপ্তরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে র্যাব ফোর্সেসের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ দমন, চরমপন্থি দমন, জলদস্যু দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সর্বশেষ বিজয়ের দ্বার প্রান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। র্যাবের ডি-র্যাডিকালাইজেশন ও রি-হ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম ‘নবদিগন্তের পথে’ অত্যন্ত অভিনব ও যুগান্তকারী উদ্যোগ। এর মাধ্যমে অপরাধীর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় আবার তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। আত্মসমর্পণ করা ৪২১ জন সন্ত্রাসী (জলদস্যু ও জঙ্গি) পুনর্বাসন প্রক্রিয়া যুক্ত রয়েছে। এসব কাজের মাধ্যমে র্যাব মানবিকতা দিয়ে অপরাধ দমনের নজিরবিহীন সাফল্য দেখিয়েছে।
র্যাবের বিভিন্ন কাজের প্রশংসা করতে গিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দেশের একমাত্র এলিট ফোর্স র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ইতোমধ্যে জননিরাপত্তা রক্ষায় গণমানুষের আস্থার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। র্যাব চরমপন্থির আগ্রাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের রক্তাক্ত জনপদে মানুষ পেয়েছে নিরাপদ জীবন। ফলে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। জঙ্গি দমনের মাধ্যমে দেশের আপামর জনগণের নিরাপত্তা সমুন্নত হয়েছে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, জলদস্যু দমনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এনেছে। বিভিন্ন হত্যা, খুন, অপহরণ, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ভিকটিম ও পরিবারের বিচার পাওয়ার পথ সুগম করেছে। র্যাব মানবপাচার বিরোধী অভিযান পরিচালনা ও ভিকটিম উদ্ধার করার ফলে নতুন জীবনের স্বাদ পেয়েছে অনেকে। বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের পাশে থাকে র্যাব। মানবিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে দুস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধীদের পাশেও দাঁড়িয়েছে।
জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল— জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিগত ও বর্তমান সময়ে শীর্ষ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনে এ এলিট ফোর্স। সম্প্রতি জঙ্গি দমনে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি ও কৌশলের আলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি দমনে যে সফল তৎপরতা চালিয়েছে তাতে র্যাবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানসহ শোলাকিয়া, সিলেটের আতিয়া মহল, ঢাকার আশুলিয়া, মিরপুর, তেজগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলে ও ঝিনাইদহসহ প্রতিটি জঙ্গি দমন অপারেশনে র্যাব তার পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে।
মাদকের ভয়াল ছোবলের কবলে গ্রাস হচ্ছে অনেক মানুষের জীবন ও সংসার— উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদক বিস্তার রোধে র্যাব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ এ সামাজিক যুদ্ধ এবং অভিযাত্রা আমাদের সফল করতে হবে। পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযানের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা মাদকবিরোধী অভিযান সুসংহত করার লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলায় একটি পরিপূর্ণ ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছি। একই সঙ্গে আমরা একটি যুগোপযোগী ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছি। গত এক বছরে র্যাবের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ পিস ইয়াবা, ১৪৯ কেজি হেরোইন, ২৮ কেজি আইস, ১ লাখ ৩৯ হাজার বোতল ফেনসিডিলসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭১১ কোটি টাকা।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, একটা সময় এমন ছিল যে বিশ্ব ঐতিহ্যের নিদর্শন সুন্দরবন ছিল বনদস্যু ও জলদস্যুদের অভয়ারণ্য। সুন্দরবনের বাওয়ালি নৌয়ালীসহ প্রায় ২৫ লাখ মানুষের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিল এ বনদস্যুরা। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধান ও র্যাবের কর্মতৎপরতায় সুন্দরবনকে আমরা দস্যুমুক্ত করেছি।
তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩২টি জলদস্যু/বনদস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য, ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদসহ র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করানোর মধ্যেই র্যাব ক্ষান্ত যায়নি। বরং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে। সুন্দরবনে আজ শান্তির সুবাতাস বইছে। এছাড়া র্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কক্সবাজার ও মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চলের ১৮টি বাহিনীর ৭৭ জন সদস্য, ১৮৮টি অস্ত্র ও ৯ হাজার ৭০৩ রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে।