বুধবার, ৯ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | ঢাকা | শিরোনাম » আইন পরিবর্তনেও কমেনি ধর্ষণ, তাই দরকার মানসিকতার পরিবর্তন
আইন পরিবর্তনেও কমেনি ধর্ষণ, তাই দরকার মানসিকতার পরিবর্তন
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নারী নির্যাতন দমন আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন। হঠাৎ আন্দোলন হলো, ধর্ষণ নির্যাতনের সাজা মৃত্যুদণ্ড করতে হবে। সরকার খুব দ্রুত রাজি হলো, কিন্তু আমরা কি দেখছি? আইনের পরিবর্তনেও ধর্ষণ বন্ধ হয়নি। বরং আমরা দেখছি ধর্ষণ আরও বেড়ে গেছে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ এর প্রতিপাদ্য, ‘টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই অগ্রগণ্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক ন্যাশনাল ইনকোয়ারি খসড়া প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, জেন্ডার-ইকুয়ালিটির ক্ষেত্রে অত্যন্ত তৎপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সাড়ে তিন বছরের সেবামূলক শাসনামলে সংবিধান থেকে শুরু করে কার্যক্রমে সমতা বিষয়টি অনুসরণ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসব অত্যন্ত নির্মম ও দুঃখজনকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জেন্ডার-ইকুয়ালিটির কাজ আবার শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর যে নির্দেশনা বা ফাউন্ডেশন সেটার ওপরে প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন।মন্ত্রী বলেন, আমরা যত আইনই করি না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বৈষম্য দূরীকরণ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু আমরা জেন্ডার-ইকুয়ালিটির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। আবার এটা রাতারাতিও সম্ভব না। এজন্য প্রধানমন্ত্রী একটি সোস্যাল সেফটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা চালু করেছেন।
সম্পদের সমবণ্টন ও উত্তরাধিকার প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, জেন্ডার-ইকুয়ালিটির ক্ষেত্রে, সম্পদের সমান বণ্টনের ক্ষেত্রে ধর্ম একটা প্রতিবন্ধকতা এটা আমার মনে হয় না। আমরা সবাই চিন্তাভাবনা করলে এমন ভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে পারব। কারণ ইসলাম ধর্ম বা অন্য যে কোনো ধর্ম সম্পদের বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না।
মন্ত্রী বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব। সেটা পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও বদলাতে হবে। আমার মনে হয়, পাশাপাশি যদি দুটোকে রেখে অর্থাৎ বৈষম্য দূরীকরণ ও মানসিকতার পরিবর্তন হয় তাহলে আমরা আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন দেখতে পাবো।
বৈষম্য দূরীকরণ ও মানসিকতার পরিবর্তনে জেন্ডার-ইকুয়ালিটি চাইলে সবকিছুর আগে সচেতনতা দরকার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই সচেতনতার জন্য মানবাধিকার কমিশনসহ এখানে উপস্থিত নারী সংগঠনগুলোকে অনুরোধ জানাচ্ছি গ্রামে যেতে। কারণ, আমাদের ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে থাকেন। আপনাদের ওইখানে যেতে হবে। কারণ ওখানে নারী নির্যাতনের অবস্থা প্রকট। যেখানে পরিবর্তন আনা খুব প্রয়োজন। সেখানে যদি পৌঁছাতে পারেন, সচেতনতা বাড়াতে পারেন, তাহলে আমরা যে আইনগুলো করেছি সেগুলো পাশে রেখেই আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, সমাজের একটা বড় অংশের উদাসীনতা রয়েছে। নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে শুধু নারীই শিকার হচ্ছে না, পরিবার, সমাজ, শিশু, পুরুষও ভুক্তভোগী। নারী ধর্ষণের ক্ষেত্রে আনসেফ এবরশনের বিষয়টি সামনে আসছে। সম্ভ্রমের মূল্য, নিরাপত্তা দিতে না পারার কারণে ডিগনিটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগেও ৩০ শতাংশ ভায়োলেন্সের শিকার নারী। প্রতি চারজন নারীর একজন কোনো না কোনোভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ভায়োলেন্সের সুযোগ সবক্ষেত্রেই আছে। আমরা অনেক উন্নয়নের কথা বলছি, কিন্তু নারীর মর্যাদা, ভায়োলেন্স, ধর্ষণ যদি ঠেকাতে না পারি তাহলে এই উন্নয়ন কিন্তু টেকসই হবে না।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরুই হয়েছিল বৈষম্য থেকে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল অসাধারণভাবে। তখন এতো এতো নারী সংগঠন ছিল না। বঙ্গবন্ধুই নারীর তৈরি পণ্য বিক্রয়, প্রদর্শনের কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। মধ্যখানে আমরা এসে পথ হারিয়েছি। আমরা ১৯৭২ এ নারীর অধিকার ও সমতার কথা বলেছি। রাষ্ট্র সমাজে নারীর অধিকারের কথা বঙ্গবন্ধুই শুরু করেছিলেন। সেটা মাঝে পথ হারায়। বঙ্গবন্ধুই প্রথম নারীদের জন্য ১৯ জেলায় মাল্টিসেক্টরাল মাতৃকেন্দ্র ১৯ জেলায় চালু করেছিলেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা ছড়িয়ে দেন। শুধু নারী নির্যাতন নয়, সবকিছুই সংযোজন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর প্রশ্নে খুবই সংবেদনশীল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী। প্যানেল বক্তার বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন।
আলোচনা সভায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক ন্যাশনাল ইনকোয়ারি খসড়া প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপি কনসালট্যান্ট আবুল হোসেন ও মানবাধিকার কমিশন সদস্য জেসমিন আরা বেগম।