শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

N2N Online TV
বুধবার, ৯ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » কেন অলিগার্কদের প্রমোদতরী জব্দ হচ্ছে?
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » কেন অলিগার্কদের প্রমোদতরী জব্দ হচ্ছে?
১৩৪ বার পঠিত
বুধবার, ৯ মার্চ ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

কেন অলিগার্কদের প্রমোদতরী জব্দ হচ্ছে?

---

নিউইয়র্ক, মিয়ামিসহ বিশ্বের বড় বড় শহরে নিজেদের সম্পত্তি তড়িঘড়ি করে বিক্রি করে দিচ্ছেন রুশ অভিজাতরা। বিলাসবহুল প্রাসাদ, বাংলো, আকাশছোঁয়া ভবনের সৈকতমুখী অ্যাপার্টমেন্ট ও সাগরের নীল জলরাশিতে ভাসমান প্রমোদতরীগুলো যত দ্রুত সম্ভব বিক্রি করে দিতে পারলেই যেন তারা বেঁচে যান।

না-হলে তা হাতছাড়া হয়ে যাবে মুহূর্তেই। কর্তৃপক্ষ জব্দ করে নিয়ে যাবেন তাদের সব সম্পত্তি।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে রুশ ধনকুবের ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সমন্বিত ও ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-ঘনিষ্ঠ অভিজাতদের সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছে সরকারগুলো। রাশিয়ার এসব অভিজাতদের অলিগার্ক নামেই চেনে বিশ্ব।

তারা যে এমন পরিস্থিতিতে পড়বেন—বহু আগেই স্বয়ং প্রেসিডেন্ট পুতিন সতর্ক করে দিয়েছিলেন। নিজেদের রক্ষায় আগেভাগেই প্রস্তুত হতে বলা হয়েছিল তাদের। এরপর ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে একীভূত করলে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার তিক্ততা বাড়ে। তখন থেকেই রুশ ধনকুবেরদের ওপর শুরু হয় ক্রমাগত নিষেধাজ্ঞা।

পুতিনের হুঁশিয়ারি পাওয়ার পর ধনকুবেরদের কেউ কেউ রাশিয়ায় বিনিয়োগ শুরু করেন। বাকিরা তাদের অর্থের একটি অংশ বিদেশি কোম্পানি ও ফুটবল ক্লাবে রেখে দেন। বিদেশি শেয়ারবাজারেও তারা তালিকাভুক্ত আছেন। ইউক্রেনযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার পর থেকে রুশ ধনকুবেরদের খারাপ সময়ই যাচ্ছে বলা চলে। তাদের বিশাল বিশাল প্রমোদতরী ও প্রাসাদগুলো পশ্চিমা দেশগুলো জব্দ করে নিয়ে যাচ্ছে। বিপদ ও ভীতি তাদের পিছু ছাড়ছে না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে বলেছেন, তাদের প্রমোদতরী, বিলাসবহুল অ্যাপার্টম্যান্ট ও হেলিকপ্টার জব্দ করা হবে। ইউরোপীয় মিত্রদের মতো আমরাও তাদের অবৈধ সম্পদ কেড়ে নেব।

তাদের সম্পদ খুঁজে বের করতে মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয় একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে টাস্কফোর্স ক্লেপটোক্যাপচার। পশ্চিমা সরকারগুলো বলছে, পুতিনের ঘনিষ্ঠতা থেকে লাভবান হয়েছেন অলিগার্করা। তাদের অনেকেই রাশিয়ার বাইরে বসবাস করছেন। সম্পত্তি ক্রয় ও অন্যান্য বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা দেশটির স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছেন। এখন তাদের চেপে ধরার সময় এসেছে।

এবার পুতিনকে বাগে আনতে অলিগার্কদের নিশানা বানিয়েছে পশ্চিমারা। যদিও কিছু কিছু রুশ অভিজাত যুদ্ধের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। এতে অনেক বিখ্যাত বিত্তশালীই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রয়েছেন। জ্বালানি ব্যবসা থেকে ধনকুবের হওয়া রোমান আব্রামোভিচ দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি ব্রিটিশ ফুটবল ক্লাব চেলসি এফসির মালিক। ইতিমধ্যে ক্লাবটি বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

অলিগার্ক কারা?

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষা থেকে শব্দটি এসেছে। অলিগার্কি বলতে একটি প্রভাবশালী ব্যবস্থাকে বোঝায়, যাদের হাতে ছোট ছোট গোষ্ঠীর নেতৃত্ব থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শব্দটি সুনির্দিষ্ট অর্থ পেয়েছে। অলিগার্ক শব্দটি রাশিয়া সংশ্লিষ্ট হলে সেই সব ধনকুবেরদের বোঝায়, যারা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে বিপুল প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন। তারা দোর্দণ্ড প্রতাপশালী, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গেও ওঠবস আছে।

গ্রিক অলিগই ও আরখেন যুক্ত হয়ে অলিগার্ক শব্দ। অলিগই অর্থ গুটিকয়েক, আর আরখেন অর্থ শাসন করা। অলিগার্করা শাসক গোষ্ঠীরই অংশ। ধর্ম, আর্থিক প্রভাব, আভিজাত্য ও ভাষায় সমাজের বাকিদের সঙ্গে তাদের ফারাক থাকে। রাশিয়ার রাজনৈতিক পদ-পদবিতেও তারা এগিয়ে।

যেমন, ক্রিমিয়ায় প্রেসিডেন্ট পুতিন নতুন একটি সেতু উদ্বোধন করেছেন। এটি নির্মাণ করেছে তার বন্ধু আর্কাডি রোটেনবার্গের কোম্পানি। যে গাড়িতে করে তিনি সেতুটি পাড়ি দিয়েছেন, সেটি বানিয়েছে সের্গেই চেমেজভের কোম্পানি রোস্টেক।

অলিগার্ক রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রও অনুসরণ করে। উদহারণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের সেক্রেটারি নিখোলাই প্যাট্রুশেভের ছেলে দিমিত্রিকে রাশিয়ার কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পশ্চিমাদের তীরের নিশানায় তারা কেন?

ক্রিমিয়া দখল ও ইউক্রেনে সহিংসতায় যোগসাজশ থাকায় ২০১৮ সালে বহু অলিগার্ক ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক অর্থমন্ত্রী স্টিভ মানুচিন বলেন, এই দুর্নীতির ব্যবস্থা থেকে যেসব রাজনীতিবিদ, অভিজাত ও অলিগার্ক সুবিধা গ্রহণ করবেন, রুশ সরকারের অস্থিতিশীল তৎপরতার পরিণতি থেকে তাদের কেউই রেহাই পাবেন না। তাদের ফুরসত দেওয়া যাবে না।

অতীতে বহু রুশ অভিজাতদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জো বাইডেন প্রশাসন বলছে, ইউক্রেনে পুতিনের সামরিক আগ্রাসনে অলিগার্কদের আর্থিক সমর্থন রয়েছে। কাজেই তাদের খেসারত দিতে হবে।

গেল ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমা মিত্ররা যখন নিষেধাজ্ঞার পাঁয়তারা করছে, তখন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রিটারি জেন সাকি বলেন, পুতিনকে তার নিজ দেশের অর্থনীতি, তার ধনী-বিত্তশালী বন্ধু ও রাশিয়ার জনগণের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব চেয়ে চেয়ে দেখতে হবে। বিশ্ববাজার থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করেই দিতেই নিষেধাজ্ঞা।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মার্কিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল লিসা ও. মোনাকো বলেন, দুর্নীতি ও নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে যারা রাশিয়ার সরকারকে শক্তিশালী করেছেন, আপনাদের সেই নিরাপদ স্বর্গ আর থাকছে না। সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হবে। অলিগার্করা হুঁশিয়ার হোন: আপনাদের অপরাধী তৎপরতা বন্ধ করতে আমরা সব ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করব।

কিন্তু তাদের সম্পদ জব্দ করা যে খুব সহজ হবে; তাও কিন্তু না। জব্দ হওয়া থেকে বাঁচাতে তারা নিরাপদ জায়গাগুলোতে সম্পদ হস্তান্তর করেছেন। বড় বড় প্রমোদতরীগুলোকে এমন সব জায়গায় নিয়ে গেছেন, যেখানে নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর কিংবা তাদের সম্পদ জব্দ বা আটক করা যাবে না।

কীভাবে ক্ষমতা ও বিত্ত পেলেন অলিগার্করা?

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্বাধীন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট লিওনিড কুসমার সময়ে পুরনো অলিগার্করা সমৃদ্ধ হয়েছেন। কিয়েভভিত্তিক ইউক্রেনিয়ান ইনস্টিটিউট ফর দ্য ফিউচার এমন দাবি করেছে। সংস্থাটি বলছে, কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে অলিগার্করা তাদের অধিকাংশ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া সরকারি সম্পদ অস্বচ্ছ পক্রিয়ায় বেসরকারিকরণেরও সুবিধাভোগী তারা। পরে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ শুরু করেন অলিগার্করা।

ইউক্রেনের নড়বড়ে সামাজিক অবস্থার জন্য সেখানকার ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের ওপর অলিগার্কদের ব্যাপক প্রভাব দায়ী। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ভিক্টর আন্দ্রুসিভ বলেন, অলিগার্করা একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষ, কাজ করেন বিশেষ পদ্ধতিতে, তাদের জীবন-যাপন ও প্রভাব বিস্তারের পদ্ধতিও বিশেষ ধরণের।

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, তারা আসলে ঠিক ব্যবসায়ী না। তারা ধনী ব্যক্তি, কিন্তু যেভাবে তারা ধনী হয়েছেন; তা একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে যেমন হয় তার থেকে ভিন্ন। তারা নিজেরা ব্যবসা তৈরি করেননি বরং তারা রাষ্ট্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে হস্তগত করেছেন।

রাশিয়ার বর্তমান বিত্তশালী ও ধনকুবেররা বিভিন্নভাবে তাদের সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জন করেছেন। কালোতালিকাভুক্ত হওয়ারা পুতিনের নিজস্ব চক্রের লোক ও দীর্ঘদিনের সহযোগী।

এত অলিগার্ক রাশিয়াতে কেন?

রাশিয়া ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অলিগার্ক আছেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে। এরপরের ঘটনাবলীর জন্যই অলিগার্করা সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সেই বছর ক্রিসমাসের দিনে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ পদত্যাগ করেন। ক্ষমতা চলে যায় বরিস ইয়েলৎসিনের কাছে।

সাধারণত সোভিয়েত যুগে কোনো ব্যক্তি মালিকাধীন সম্পদ ছিল না। পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বেছে নিলে রাশিয়ায় জ্বালানি, আর্থিক ও শিল্পখাতে ব্যাপকভাবে বেসরকারিকরণ হয়েছে। এতে নব্বইয়ের দশকে বহু মানুষ রাতারাতি বিত্তশালী হয়ে উঠেছিলেন। সেসময় রাষ্ট্রের সঠিক জায়গায় যোগাযোগ ও অবস্থান থাকলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিভিন্ন খাতের বিশাল অংশ খুব সহজেই নিজের কবজায় নেওয়া সম্ভব হতো—এমনকি তেল, গ্যাস ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ পর্যন্ত।

পেরেস্ত্রইকা নীতি বাস্তবায়নের পর খালি হাতে শুরু করলেও বাজার অর্থনীতিতে জড়িত হওয়ার পর রাতারাতি বিপুল বিত্তের মালিক বনে গিয়েছিলেন অলিগার্করা।

এসব সম্পদ হস্তগত করতে তারা সরকারি কর্মকর্তাদের মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে হাত করে নিতেন। অথবা নিজেদের কোম্পানিতে বড় কোন পদে বসিয়ে দিতেন। অলিগার্করা তেলক্ষেত্র, স্টিল কারখানা, বড় প্রকৌশল কোম্পানি বা সংবাদমাধ্যমের মালিক ছিলেন। কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাতের কারণে প্রায়শই তারা করফাঁকি দিতেন।

এই অলিগার্করাই প্রেসিডেন্ট ইয়েলৎসিনের সমর্থক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তার নির্বাচনী প্রচারে বড় ধরনের তহবিল সরবরাহ করেছিলেন।

পুতিনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক

ক্ষমতায় এসে অলিগার্কদের নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করলেন পুতিন। অভিজাতদের সঙ্গে তার একটা ক্ষমতার লড়াইও হয়েছে। পরে দেনদরবারে আসার পর তাদের নিজের কাজে ব্যবহার করেন তিনি। যারা তার সরকারের প্রতি রাজনৈতিক আনুগত্য বজায় রেখেছেন, তারা আরও সাফল্য পেয়েছেন। আবার পুতিনের সঙ্গে সম্পর্কের বদৌলতে অনেকে আভিজাত্যের খাতায় নাম লিখিয়েছেন।

পুতিনকে মানেননি এমন পুরনো অলিগার্করা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যেমন, প্রখ্যাত ব্যাংকার বরিস বেরেযভস্কি। একসময় রাশিয়ার সবচেয়ে ধনাঢ্য মিখাইল খদরকভস্কি এখন লন্ডনে বসবাস করেন। আবার মিখাইল মিরিলাশভেলির মতো কেউ কারাবন্দিও হয়েছেন।

২০১৯ সালে ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকা অলিগার্ক সম্পর্কে পুতিনকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অলিগার্ক বলে এখন আর আমাদের কিছু নেই।

কিন্তু পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন অনেকেই তার পৃষ্ঠপোষকতায় বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। শৈশবে পুতিনের সঙ্গে একই জুডো ক্লাবে যেতেন বরিস রটেনবার্গ। ফোর্বস সাময়িকীর মতে, রটেনবার্গ বর্তমানে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের সম্পদের মালিক।

তাদের সবার কী প্রমোদতরী আছে?

দেশটির আল্ট্রা-হাই-নেট ব্যক্তিদের (ইউএইচএনডব্লিউআই) অধিকাংশেরই প্রমোদতরী আছে। আল্ট্রা-হাই-নেট বলতে যারা সর্বনিম্ন তিন কোটি মার্কিন ডলারের মালিক। ইতিমধ্যে ১৪ কোটি ৩০ লাখ ইউরোর প্রাসাদ, বাড়ি ও প্রমোদতরী জব্দ করেছে ইতালি সরকার। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ার পর তারা এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।

এছাড়া রাশিয়ার তেল উৎপাদক রোসনেফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আইগর সিচিনের একটি প্রমোদতরী জব্দ করেছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ। ২৮০ ফুটের তরীটির নাম আমোরে ভিরো। ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল লা কিওতাতা জাহাজচাতাল থেকে এটি জব্দ করা হয়েছে। এটি তাৎক্ষণিকভাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সিচিনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

প্রমোদতরী ছাড়াও তারা অমূল্য শিল্পকর্মের ক্রেতা, ট্রফি রিয়েল ইস্টেট, স্পোর্টস টিম ও প্রাইভেট জেটের মালিক। অলিগার্কদের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অভিজাত অঞ্চলে প্রাসাদ কিনে বসবাস করছেন। তবে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোতে তাদের বিপুল শেয়ার আছে।

ইউক্রেন আগ্রাসন নিয়ে তারা যা বলছেন

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা অলেগ ডেরিপাসকা সামাজিকমাধ্যমে বলেন, শান্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর কোনো বিকল্প নেই। ২০১৯ সালে নিজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন এই অলিগার্ক। তার দাবি, মিথ্যা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তাকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংক আলফার প্রতিষ্ঠাতা মিখাইল ফ্রিডম্যানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিনি এই সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ জানাবেন। বলেছেন, অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিকভাবে তার সঙ্গে পুতিনের সম্পর্ক নেই। এই শিল্পপতি আরও বলেন, আমরা অনেক ভালো কাজ করেছি। বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ ও বহু মানুষের কর্মসংস্থানের যোগান দিয়েছি। নিজেদের খ্যাতি ধরে রাখতে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।

রাশিয়ান অলিগার্ক সন্তান ইভজেনি লেবেডেভ লন্ডনের ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার মালিক। তার দৈনিকের প্রথম পাতায় বড় করে শিরোনাম করা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন, দয়া করে এই যুদ্ধ বন্ধ করেন।’

তার বাবা আলেক্সান্ডার লেবেডেভ কেজিবির সাবেক গোয়েন্দা ও ব্যাংকের মালিক। ইভজেনি বলেন, একজন রাশিয়ার নাগরিক হিসেবে বলছি, ইউক্রেনের ভাই-বোনদের হত্যা করা বন্ধ করুন। একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে ইউরোপকে যুদ্ধ থেকে রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছি।



আর্কাইভ