শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিক্ষা ও প্রযুক্তি | শিরোনাম » স্থপতি ইনস্টিটিউটের সৃষ্টিশীল ও কর্মমুখর অর্ধশত বছরের পথচলা
স্থপতি ইনস্টিটিউটের সৃষ্টিশীল ও কর্মমুখর অর্ধশত বছরের পথচলা
১৯৭২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি স্থাপত্যাচার্য মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত হয়ে দেশের স্থপতিদের সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট (বা স্ত ই) আজ তার সৃষ্টিশীল ও কর্মমুখর অর্ধশতকের পথচলা পূর্ণ করল। স্থাপত্য পেশার উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের আন্তরিক ও যুগোপযোগী দিকনির্দেশনা ও কর্মকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশি স্থপতিরা পেশাগত উৎকর্ষতার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সম্মান বয়ে এনেছেন।
এ দেশের অনন্য ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে সমুন্নত রেখে শৈল্পিক ও প্রযুক্তি প্রসূত উৎকর্ষতার সমন্বয়ে স্থাপত্য সৃষ্টির মাধ্যমে তারা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সুবর্ণজয়ন্তীর বছর হিসেবে ২০২২ সালটিকে স্মরণীয় করতে সারা বছরব্যাপী বিবিধ ও বহুমাত্রিক উৎসব এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যা স্থাপত্য অঙ্গনের অর্জন ও ভবিষ্যতের অগ্রযাত্রার প্রতিশ্রুত পরিকল্পনার প্রতিবিম্ব দেশবাসীর সামনে উপস্থাপিত হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট।
সেই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণ করে এবং বছরব্যাপী বা স্থ ই সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উদ্বোধনের জন্যে শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আই এ বি সেন্টারে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের গৌরবময় অর্জনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এ উপলক্ষে নেওয়া সারা বছরের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়।
এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সম্মানী সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি তার বক্তব্যে আমাদের জল মাটির ছোঁয়ায় স্থাপত্যকীর্তি তৈরির জন্য একটা তাগিদে স্থপতিরা এগিয়ে যাবেন- এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। দেশে পরিকল্পিত ফিজিক্যাল প্ল্যানিংয়ের যে প্রয়োজনীয়তার কথা বঙ্গবন্ধু বলেছেন তার বাস্তবায়নেও বা স্ত ই অগ্রগামী ভূমিকা নেবে বলে প্রত্যাশা করেন।
স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সম্মানী সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থবহ এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থে জাতির জনকের ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থপতিদের অগ্রগামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
বিগত ৫০ বছর প্রায় তিন হাজার স্নাতক ডিগ্রিধারী স্থপতিদের একমাত্র সংগঠন হিসেবে বা স্থ ই দায়িত্বশীল আর সংবেদনশীল পেশাদারিত্বের চর্চা নিশ্চিতকরণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। সরকারের বিভিন্ন টেকসই উন্নয়ন উদ্যোগের পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততায় সবার সঙ্গে মিলে সবার অন্তর্ভুক্তিতায় দেশ গঠনের জন্যে সংগঠনের সকল সদস্যদের নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে সম্প্রতি বিশ্ব সেরা স্থাপত্যের জন্যে রয়েল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ব বরেণ্য বাংলাদেশি স্থপতি কাশেফ চৌধুরী ‘রাইটেন ইন রেইন : পোয়েট্রি অ্যান্ড পাওয়ার অব আর্কিটেক্ট ইন ডেলটা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এ অঞ্চলের স্থাপত্যের কাব্যতা আর শক্তির উন্মেষ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার গৌরবময় পটভূমি আর তার বিস্তারের উপস্থাপনের মাধ্যমে তিনি আত্মবিশ্বাস আর আত্মনির্ভরশীলতায় নিজ স্বরূপ সন্ধানী অর্থবহ টেকসই উন্নয়ন স্থাপত্য চর্চার যথার্থতা তুলে ধরেন।
বা স্থ ই’র প্রেসিডেন্ট স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ আরিফ।
মোবাশ্বের হোসেন বলেন, আগামী দিনের দেশ গঠনের অভিযাত্রায় বিগত ৫০ বছরের ন্যায় স্থপতিরা সর্বোচ্চ মননশীলতায় আর দায়িত্বশীলতায় কর্তব্যনিষ্ঠ থাকবে, এটিই বা স্ত ই–র প্রত্যয়ী অঙ্গীকার।
অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক আইনুন নিশাত। অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, জনমানুষের জন্য অগ্রাধিকার স্থাপত্য চিন্তার প্রয়োজন। গণপরিসরভিত্তিক স্থাপত্যচর্চা আর প্রকৃতিবান্ধবতায় পরিসর ও বাস্তুকলার উন্নয়ন প্রত্যাশিত। অন্তর্ভুক্তিতায় আর বিশ্লেষণধর্মী মনোভাবের সংমিশ্রণে বাস্তুসংস্থানের প্রয়োজনকে জোর দিতে হবে।
অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, জল নির্ভরতা আর জলের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে যথাযথ স্থাপত্যধারা তৈরির তাগিদ তৈরি হচ্ছে। জলবায়ু আর বৈশ্বিক পরিবর্তনের ধারায় আমাদের আরও সংবেদনশীল স্থাপত্য নির্মাণশৈলী খুঁজে বের করতে হবে। অভিযোজন ধারণায় তার পরিশুদ্ধতার প্রক্রিয়াও আমাদের বের করা প্রয়োজন।
তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট নিয়ে তাদের নানা ভাবনা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছাড়াও গণমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সদস্য ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।