মৃত্যু আমাদের কত কাছাকাছি!
বৃহস্পতিবার বাদ জোহর ৪৪ বছর বয়স্ক একজন পুরুষের জানাজা পড়লাম। তিনি তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পূর্ব লন্ডনে তাঁর ছোট বোনের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিলেন। বোনের বাড়ির সম্মুখে পৌঁছে স্ত্রী-সন্তানদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে বলেন,’তোমরা ঘরে যাও। আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।’
স্বামীর কথামতো স্ত্রী সন্তানদেরকে নিয়ে ঘরে চলে গেলেন। কিন্তু দেখলেন, অনেক্ষণ পেরিয়ে গেলেও স্বামী আসছেন না । স্ত্রী কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে এলেন। দেখলেন, গাড়ির দরজা চারদিক থেকে বন্ধ। স্বামী গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের ওপর মুখগুজে বসে আছেন । দ্রুত ড্রাইভিং সীটের দরজা খুলে স্বামীর গায়ে হাত রাখলেন। কিন্তু কোনো নড়াচড়া নেই। তাঁর দেহ নিথর-নিস্তব্ধ। তাড়াতাড়ি ৯৯৯ নাম্বারে কল করলেন। অ্যাম্বুল্যান্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে নিয়ে গেলো। হাসপাতাল পৌঁছার পর জানতে পালাম তাঁর স্বামী আর নেই।
কথাগুলো বলছিলেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের প্রধান ইমাম শায়খ আব্দুল কাইয়ুম। শুক্রবার (২০ আগস্ট) জুমার খুবতার শুরুতেই তিনি এই করুণ ঘটনাটির বর্ণনা দেন । তিনি যখন জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন তখন মসজিদের মেহরাবের সম্মুখের ছোট রুমটিতে কফিনবন্দী তিনটি মরদেহ জানাজার জন্য অপেক্ষমান ছিলো ।
ইমাম আব্দুল কাইয়ূম বললেন, এই যে তিনজনের লাশ জানাজার জন্য অপেক্ষমান রয়েছে তারা আজ শুক্রবারের জুমার নামাজ পড়ার সুযোগ পেলেন না।
আমাদের কার ডাক কোন সময়, কোন অবস্থায় এসে পড়ে জানি না। যেকোনো সময়, যে কোনো মুহুর্তে ডাক পড়তে পারে। নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেলে আমাদের আর কোনো আমল করার সুযোগ থাকবে না।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিনই প্রস্তুতি নিই । বলি-কাল থেকে, আগামী সপ্তাহ থেকে, কিংবা আগামী মাস থেকে নিয়মিত নামাজ-কালাম পড়তে শুরু করবো । দুনিয়াবী ব্যস্ততা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ পথে নিবেদিত হয়ে যাবো। কিন্তু আজ কাল পরশু করে দিনের পর দিন চলে যায় আমরা আর আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে পারি না। এভাবে একদিন হঠাৎ মৃত্যুদূত এসে হাজির হয়ে যান । একবার যখন তিনি চলে আসেন তখন তাঁর হাত থেকে বাঁচার কোনো সুযোগ থাকে না।
তিনি বলেন, পরকালে যখন পাপিরা জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকবে তখন আল্লাহ তায়ালার কাছে আরজ করে বলবে হে আল্লাহ, আমরা এভাবে শাস্তি হবে বুঝতে পারিনি। আমাদেরকে আরো একটিবারের জন্য দুনিয়ার জীবনে যাওয়ার সুযোগ দিন। আমরা সুন্দর আমল করে আসবো। বিনিময়ে আপনি আমাদের জান্নাত দিয়ে দেবেন।
জবাবে আল্লাহ্ তায়ালা বলবেন, আমি যে জীবন দিয়েছিলাম তা কি ভালো আমল করার জন্য যথেষ্ট ছিলো না? আমি কি আমার রাসুলদের পাঠিয়ে তোমাদেরকে আখেরাতের শাস্তির কথা জানিয়ে দিইনি?
জুমার নামাজ শেষে মরহুম ব্যক্তিটির নাম-পরিচয় জানতে কৌতুহলী হয়ে ওঠলাম । জানতে পারলাম মরহুমের নাম মো. কবির উদ্দিন। তিনি কন্টিনেন্টাল ফুড সাপ্লাই নামক একটি কোম্পানীর ডাইরেক্টর ছিলেন। রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন ক্যাটারিং কোম্পানীকে গ্রোসারী সামগ্রী সরবরাহ করতেন । সোমবার (১৬ আগস্ট) দিনের বেলা অফিস করেন। বিকেলে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যেতে বের হন। কিন্তু বোনের ঘরের কাছাকাছি পৌঁছেও বোনের ঘরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এর আগেই মৃত্যুদূত এসে সাক্ষাৎ করেন।
পূর্ব লন্ডনের সুপরিচিত ক্যাটারিং কোম্পানী অল-সিজনের ডাইরেক্টর কাজি পারভেজ জানালেন, কবির উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে তাদের কোম্পানীতে গ্রোসারী-সামগ্রী সাপ্লাই দিতেন। খুবই বন্ধুবৎসল হাস্যজ্জল একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর দেশের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কালিডহর গ্রামে। কবির উদ্দিনের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে স্বজন-বন্ধুবান্ধব পরিচিতজন গভীরভাবে শোকাহত ।
আল্লাহ্ তায়ালা যেন কবির উদ্দিনকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতে সমাসীন করেন। তাঁর মৃত্যূ থেকে যেন আমরা শিক্ষা নিতে পারি । অনুধাবন করতে পারি, মৃত্যূ আমাদের কত কাছাকাছি । আমরা যেন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে পারি। আমিন।
লেখাটি তাইসির মাহমুদ এর ফেসবুক ওয়াল থেকে পাওয়া।